সুনামগঞ্জ , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
মুজিববর্ষ উদযাপনে খরচ ১২৬১ কোটি টাকা পুলিশের নতুন আইজিপি বাহারুল আলম লাখে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় শিক্ষা কর্মকর্তাকে জামালগঞ্জে অগ্নিকান্ডে দুটি বসতঘর পুড়ে ছাই ধর্মপাশায় আসামি গ্রেফতার শহরে ফুটপাত দখল করে দোকানপাট: যানজটে জনভোগান্তি পিকনিক স্পটে দুর্বৃত্তদের হামলা ও ভাঙচুর ৭০ লাখ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ তুমি যে চেয়ে আছ আকাশ ভরে আ.লীগের সঙ্গে কোনো সমঝোতা নেই : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জামালগঞ্জে এক পরিবারের ৩ বসতঘর পুড়ে ছাই ব্যাংকের সব শাখায় ১, ২ ও ৫ টাকার কয়েন লেনদেনের নির্দেশ সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ৮ দিনের রিমান্ডে সারদায় প্রশিক্ষণরত আরও তিন এসআইকে অব্যাহতি আ.লীগের পুনর্বাসনে চেষ্টাকারীরা গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবে : হাসনাত আবদুল্লাহ খেলাপি আদায়ে অর্থ ঋণ আদালতকে সক্রিয় করছে সরকার সংস্কার শেষে নির্বাচন কোনো যৌক্তিক কথা নয় : মঈন খান ফোকাস এখন একটাই- নির্বাচন : মির্জা ফখরুল আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও বাজেট বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ জিপিএ-৫ শিক্ষার একমাত্র মানদন্ড হতে পারে না : উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার

গ্রাম সংলগ্ন কৃষি জমিতে ৩১ বছর ধরে অবৈধ ইট ভাটা

  • আপলোড সময় : ১৫-১১-২০২৪ ০৯:০৭:২১ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৫-১১-২০২৪ ০৯:০৭:২১ পূর্বাহ্ন
গ্রাম সংলগ্ন কৃষি জমিতে ৩১ বছর ধরে অবৈধ ইট ভাটা ছবি: সংগৃহীত
ধর্মপাশা প্রতিনিধি :: ধর্মপাশা উপজেলার মহদীপুর গ্রাম সংলগ্ন কৃষি জমিতে বিধি লঙ্ঘন করে গত ৩১ বছর ধরে অবৈধভাবে ইটভাটার কার্যক্রম চলে আসছে। ইট ভাটা সংলগ্ন গ্রামের মানুষেরা কালো ধোঁয়ার কারণে জ্বর, সর্দি ও কাশিসহ বিভিন্ন রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। এ নিয়ে এলাকার মানুষজনদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে মহদীপুর গ্রাম সংলগ্ন মুর্শেদ ব্রিক ফিল্ড নামে ইটের ভাটাটি দুই একর ১৪ শতক কৃষি জমিতে নির্মাণ করা হয়। ২০০৪ সাল থেকে ঝিকঝাক পদ্ধতিতে ফিক্সড চুঙ্গা স্থাপন করে ইট পোড়ানো হচ্ছে। এর আগে টিনের চুঙ্গা এবং লাকড়ি দিয়ে ইট পুড়ানো হতো। ইট ভাটার দক্ষিণ পাশে আতকাপাড়া গ্রাম ও আতকাপাড়ার বন্দ (বোরো ও আমন জমি), ইটভাটার উত্তরপাশে মহদীপুর গ্রাম, পশ্চিমে মহদীপুরের কান্দা এবং পূর্বদিকে কংস নদ ঘেঁষে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজেলার কাশীপুর গ্রামটি অবস্থিত। এটির স্বত্তাধিকারী ছিলেন উপজেলার মহদীপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম। ২০২১ সালে ১৯ জুলাই তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর দুজন স্ত্রী ও এক ছেলে এই ইটভাটাটির স্বত্তাধিকারী হন। তাঁরা তিনজন এটি পরিচালনা করে আসছেন। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ২০১০ ও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৩-এ বলা হয়েছে, বসতি এলাকা, পাহাড়, বন ও জলাভূমির এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা করা যাবে না। কৃষিজমিতেও ইটভাটা অবৈধ। এই আইন না মেনেই চলছে ইটভাটার কার্যক্রম। মহদীপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক রবি মিয়া (৪০) বলেন, ইট ভাটা নির্মাণের আগে ভাটার স্থানে আমন ধান, বোরো ধান, পাট, ধনচে চাষ ও বীজতলা করা হতো। শুরুতে ২৪ কাঠা (এক কাঠা = ৮শতক) জমিতে ভাটার কাজ শুরু করলেও এখন প্রায় ১০০কাঠা স্থান ইটভাটার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইট ভাটা সংলগ্ন আমাদের ৪৪শতক রেকর্ডীয় ধানি জমি রয়েছে। ৭/৮বছর ধরে তারা জায়গাটি বিভিন্ন মালামাল রেখে দখল করে রেখেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দদের ম্যানেজ করেই এই অবৈধ ইটভাটা চালিয়ে আসছে। তিনি আরও বলেন, বাড়ির কাছেই অবৈধভাবে ইটভাটা গড়ে উঠায় এখানকার মানুষজনদের জ্বর, সর্দি ও কাশি সারাবছর লেগেই থাকে। আতকাপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুল বারেক (৬৫) বলেন, মহদীপুরের বন্দে ও দক্ষিণ পাশে আতকাপাড়া বন্দে প্রায় ৫০০ একর জমিতে বোরো ও আমন ধান চাষ করা হয়। ইটের ভাটার ধোঁয়ায় ধান গাছের লালচে রঙ হয়ে যায়। যে জমিতে আগে ২০মণ ধান হতো, এই জমিতে এখন ধান হয় ১২ থেকে ১৫মণ। এছাড়া গাছে ফল ধরাও কমে গেছে। মহদীপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আল আমিন (৩৫) বলেন, আমার বাড়ি থেকে ৫০ ফুট সামনেই এই ইট ভাটা। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নাম ভাঙিয়ে অবৈধভাবে ইট ভাটার কার্যক্রম চলে আসছে। অতীতে যারা এ নিয়ে প্রতিবাদ করেছে তাদেরকেই মিথ্যা মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। দেশে পটপরিবর্তন হওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালকের কাছে অবৈধ এই ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করাসহ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে আমি চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ করেছি। মুর্শেদ ব্রিক ফিল্ডের তিনজন স্বত্তাধিকারী। এদের মধ্যে রেজুয়ান ইসলাম রাকীব বলেন, আমরা সরকারি যাবতীয় বিধিমালা মেনে ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েই ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। আমরা কারও জায়গা দখল বা কাউকে হয়রানি করিনি। আমাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাসুদ তুষার বলেন, কৃষি জমির কাছাকাছি ইট ভাটা থাকলে বাতাসে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই দেখা দেয়, এতে ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুবীর সরকার বলেন, ইটের ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় মানুষের ফুসফুসে রোগ, ক্যান্সার, হাপানি, লিভারের সমস্যা, সর্দি, জ্বর, কাশি রোগ হতে পারে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন বলেন, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। এরপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখব। পরিবেশ অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাইমিনুল হক বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমি বুধবার (১৩ নভেম্বর) বেলা ১২টার দিকে মুর্শেদ ব্রিক ফিল্ডে গিয়ে অভিযোগকারী ও এলাকার মানুষজনদের সঙ্গে কথা বলেছি। অভিযোগের কিছু বিষয়ের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রতিবেদন পরিচালক মহোদয়ের কাছে পাঠানো হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, কৃষি জমিতে ইট ভাটা থাকার কোনো সুযোগ নেই। এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্ত করতে সহকারী পরিচালকে সেখানে পাঠানো হয়েছে। তিনি তদন্ত করে এসেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স